|

আত্মবিশ্বাসী রাজকুমারী মীরা

এক ছিল ছোট্ট ছেলে, নাম ছিল রবি। রবি ছিল অনেক কৌতূহলী। সে সবসময় নতুন কিছু শেখার তাগিদে থাকতো। একদিন স্কুল থেকে ফিরে রবি তার মাকে বললো, “মা, আমি ইংরেজি ভাষাটা ভালো করে শিখতে চাই।”

তার মা মৃদু হাসিমুখে জবাব দিলেন, “অবশ্যই শিখবে, কিন্তু তার আগে তোমার নিজের ভাষা আর সংস্কৃতি ভালো করে বুঝে নেওয়া উচিত।”

রবি কিছুটা অবাক হয়ে বললো, “কিন্তু মা, অন্য ভাষা ও সংস্কৃতি জানলে তো অনেক বেশি স্মার্ট মনে হবে।”

মা বললেন, “ঠিক বলেছো, কিন্তু নিজের ভাষা আর সংস্কৃতির উপর ভালো দখল থাকলে তুমি আরো আত্মবিশ্বাসী আর শক্তিশালী হয়ে উঠবে। চল, আমি তোমাকে একটা গল্প বলি।”

মায়ের গল্পের প্রতি রবির আগ্রহ সবসময়ই বেশি ছিল, তাই সে মনোযোগ দিয়ে শুনতে বসলো।

“এক ছিল রাজকুমারী, নাম ছিল মীরা। সে তার রাজ্যে বিদ্যাদান ও জ্ঞানের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু সে সবসময় দূরের রাজ্যের সংস্কৃতি আর ভাষা সম্পর্কে আরো জানতে চাইতো। একদিন, সে তার পিতার কাছে গিয়ে বললো, ‘পিতা, আমি দূরের রাজ্যের ভাষা শিখতে ও সংস্কৃতি দেখতে চাই।’

তার পিতা রাজা বললেন, ‘বেশ, কিন্তু তার আগে তোমার নিজের দেশের সবকিছু সম্পর্কে জানার জন্য তুমি কতটুকু চেষ্টা করেছো?’

মীরা কিছুটা চিন্তিত হয়ে বুঝতে পারলো যে সে আসলে নিজের দেশের অনেক কিছুই ঠিকভাবে জানে না। সে প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজকর্ম আর স্থানীয় লোকশিল্প সম্পর্কে তেমন জানতো না, যা তাদের দেশে বহুকাল ধরে প্রচলিত ছিল।

এখন মীরা ঠিক করলো যে আগে সে নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালো করে জানবে। সে রাজ্যের বয়স্ক মানুষদের কাছ থেকে লোকগান শিখলো, তাদের অভিজ্ঞতা শুনলো। নিজের ভাষার অজানা শব্দের মানে জানার জন্য বিভিন্ন গ্রন্থ ঘাঁটলো। আর সে আবিষ্কার করলো যে তার নিজের দেশের প্রচলিত উৎসবগুলো ছিল খুবই আনন্দদায়ক আর শিক্ষামূলক।

যখন মীরা নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে নিজেকে নিবিড়ভাবে জড়ালো, তখন সে বুঝলো যে নিজের শিকড়গুলো সত্যিই কতটা মূল্যবান। আর তখন তার পিতাও তাকে অনুমতি দিলেন দূরের রাজ্যে যাওয়ার জন্য। এবার মীরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিল, কারণ তার নিজের পরিচয়ের উপর ছিল অগাধ দখল।

মায়ের গল্প শুনে রবি আনন্দে বললো, “মা, আমি বুঝেছি। আমি আগে আমাদের বাংলার সংস্কৃতি, ভাষা আর ইতিহাস জানা শুরু করবো, তারপর অন্য ভাষা ও সংস্কৃতি শিখতে যাবো।”

মা রবিকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “তুমি ঠিক পথেই আছো। নিজের শিকড়ে শক্ত হয়ে দাঁড়ালে তুমি যে কোনো চ্যালেঞ্জ সহজেই মোকাবিলা করতে পারবে।”

তাই, রবি সেদিন থেকে শুরু করলো তার নিজের ভাষা ও সংস্কৃতির গভীরে ঢুকতে। সে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বায়োস্কোপে প্রত্যেকটি গ্রাম্য মেলা আর অনুষ্ঠান দেখে। বাংলা বইয়ে ডুবে গিয়ে অজানা কাহিনি আর ইতিহাস খুঁজে পেতো। আর এভাবেই তার মধ্যে শক্তির উত্সারিত হলো নিজেকে আর সকলের সামনে আরও বেশি করে তুলে ধরার।

এই গল্পের সঙ্গে, রবি সবার জন্য এমনই একটি বার্তা রেখে গেল: নিজের ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস ভালোভাবে না জেনে নতুন কিছু শেখা বহু গুণে মানহানি করবে। আবার এ কথায় প্রমাণ হলো, “নিজের সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানই সত্যিকার আত্মবিশ্বাসের উৎস।”

Similar Posts

Leave a Reply