|

ঈর্ষান্বিত ছোট্ট হলুদ পিকু

এক গ্রামে সুন্দর জঙ্গলের মধ্যে ছিল ছোট্ট এক পা খি, যার নাম ছিল পিকু। পিকু ছিল একটি ছোট্ট হলুদ রঙের চড়ুই পাখি। পিকু সবসময় অন্য পাখিদের মত সুন্দর ও রঙিন পালক চাইতো। সে সবসময়ই অপর পাখিদের দিকে ঈর্ষান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো।

একদিন পিকু তার বন্ধুকে বললো, “আমি কি করে তোমাদের মতো সুন্দর পালক পাবো?” তার বন্ধু কোকিল বললো, “পিকু, আমাদের সবার নিজের নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। তোমার হলুদ পালক কেমন উজ্জ্বল! ঈর্ষা থেকে মুক্ত হও আর তোমার নিজের সৌন্দর্য খুঁজে নাও।”

কিন্তু পিকু বন্ধুর কথা শুনে মোটেই খুশি হয়নি। সে তার ঝরঝরে পালকগুলো দেখে একদম খুশি থাকতো না। সে প্রত্যেক দিনই ভাবতো, “কেন আমার পালক অন্যান্য পাখিদের মতো সুন্দর আর রঙিন নয়?”

একদিন, পিকু জঙ্গলের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে একটি বিশেষ পুকুরের সন্ধান পেলো। সেই পুকুরে একবার ডুব দিলেই নাকি পাখির পালক পরিবর্তন হয়ে যায়, এই ধারণা পুরো জঙ্গলে প্রচলিত ছিল।

পিকু পুকুরে গিয়ে চুপচাপ ভাবলো, “এই পুকুরে ডুবে আমার পালক হয়তো পরিবর্তন হবে, আর সবার মতো আমাকেও অনেক সুন্দর দেখাবে।”

এই বলে পিকু পুকুরে ডুব দিল। তবে তার পালক পরিবর্তন না হয়ে পুকুরের কালচে মাটি তার শরীরে লাগলো আর পিকুর পালক হলো কালো। এখন পুকুরটি তাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো, “কী হলো পিকু, তোমার পালক কি সুন্দর হল?”

পিকু খুব দুঃখ পেলো। সে জানলো যে এই কালো পালক কারোর কাছে ভালো লাগছে না। তখন সে ঘরে ফিরে এসে খুব কান্না করলো। পিকু তখন বুঝতে পারলো, ঈর্ষা তাকে কত বড় ভুলের পথে নিয়ে গিয়েছিলো।

তারপর থেকে পিকু প্রতিজ্ঞা করলো যে সে তার সুন্দর পালক নিয়ে আগের মতোই খুশি থাকবে আর অন্যদের দিকে ঈর্ষান্বিত ভাবে তাকাবে না। যা হারিয়েছে, তা উপলব্ধি করে সে আর কখনো ঈর্ষাতে নিজেকে হারাতে দিবে না।

এখন পিকু সবার সাথে খেলা করে, গান গায় আর জঙ্গলে মুক্তভাবে উড়ে বেড়ায়। সে তার হলুদ পালক গর্ব নিয়ে প্রদর্শণ করে আর মনে মনে ভাবে, “যা আছে আমার, তা-ই ভালো!”

আস্তে আস্তে, অন্য পাখিরাও পিকুর মধ্যে যে পরিবর্তন এলো তা দেখে খুশি হল। সবাই তার সাথে বন্ধুত্ব করতে শুরু করলো। পিকু অনুভব করলো ঈর্ষা আসলে বন্ধুভাবাপন্ন নয়, ভালোবাসা আর স্বীকৃতিই আসল জিনিষ।

পিকু এবার সত্যিই খুশি, কারণ সে শিখেছে যে, “ঈর্ষা কখনোই ভালো বন্ধু হতে পারে না, নিজের বৈশিষ্ট হলো সবকিছুর চেয়ে সেরা।”

এই গল্পে, ছোট্ট পিকু আমাদের শিখিয়ে গেলো এক অসাধারণ শিক্ষামূলক বার্তা: নিজের কাছেই সবচেয়ে ভালো আপনি, তাই নিজেকে ভালোবাসতে হবে। সবসময় মনে রাখতে হবে, “যা আছে তার মধ্যেই সুখী হও।”

এভাবেই পিকু তার আনন্দময় জীবনের পথে চলতে শুরু করলো, এবং তার জীবনের এই কান্ডগুলি তার শিক্ষা হয়ে রইলো।

Similar Posts

Leave a Reply