চালাক শেয়াল কৌশিক • ছোটদের মজার গল্প
এক দেশে এক বনের গভীরে ছিলো এক শেয়াল। তার নাম ছিলো কৌশিক। কৌশিক ছিলো বনের মধ্যে সবচেয়ে চালাক শেয়াল। সে সর্বদা নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করতো, বলতো “আমি সবার চেয়ে বেশি চালাক!”। কিন্তু তার জ্ঞানহীন চালাকি অনেক সময়ই বিপদে ফেলতো।
একদিন কৌশিক ভাবলো, “আজকে আমি এমন কিছু করবো যাতে পুরো বন আমার বুদ্ধিমত্তা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়।” সেই ভাবনা থেকেই সে একটি পরিকল্পনা করলো। বনটির খুব কাছেই ছিলো একটি ছোট জলাশয়, যেখানে পশুরা পানি পান করতে আসত। কৌশিক ভাবলো, “আচ্ছা, যদি আমি মিথ্যা বলি যে জলাশয়ে এক হিংস্র কুমীর আছে, তাহলে সবাইকে ভয় দেখানো যাবে। সবাই আমার কথায় বিশ্বাস করবে এবং আমি কেমন চালাক সেটা প্রমাণ হবে।”
কৌশিক নিজের মাথায় চালাকি ছক কাটলো এবং শীঘ্রই তার ভাবনা অনুযায়ী কাজ শুরু করলো। সে আস্তে আস্তে জলাশয়ের দিকে গেলো এবং জোরে চিৎকার করতে শুরু করলো, “বাঁচাও! বাঁচাও! জলাশয়ে এক ভয়ংকর কুমীর!” তার চিৎকার শুনে বনটির অন্য পশুরা দৌড়ে আসতে লাগল। সবাই কৌশিকের কাছে এসে জানতে চাইল, “কোথায়? কোথায় কুমীর?”
কৌশিক তখন আরো জোরে চিৎকার করে দেখাতে লাগলো, “ওই দেখো, কুমীর মাথা তুলেছে!” সবাই ভয়ে পালিয়ে গেলো এবঙ আর জলাশয়ের দিকে আসতে সাহস পেলো না।
এই ব্যাপারে কৌশিক খুবই আনন্দ পেলো। সে ভাবলো, “দেখো, সবাই আমার কথা মেনে চলে গেছে!” বেশ কিছুদিন পর্যন্ত যখন কেউ জলাশয়ের দিকে যাচ্ছিল না, তখন কৌশিক নিজেই জলাশয়ে যেতো এবং পানি পানে একা থাকতো।
কয়েকদিন পরে, সত্যিই সেই জলাশয়ে একটি কুমীর এল। কৌশিক জলাশয়ের কাছে গেলে হঠাৎ কুমীর তার দিকে তেড়ে এলো। কৌশিক চিৎকার করতে শুরু করলো, “বাঁচাও! বাঁচাও! সত্যিই কুমীর! এবার সত্যিই কুমীর!” কিন্তু তার আগেই তার গলা চোক করে গেল ভয়ে।
আর বনের পশুরা তার চিৎকার শুনে এসে বললো, “কৌশিক, তুমি তো সর্বদা মিথ্যা বলে চালাকি করো। এবারও হয়ত একই ব্যাপার।” কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে এলো না। কৌশিক এবার সত্যিই বিপদে পড়লো এবং পালাতে না পারলো।
কৌশিকের এরূপ পরিণতি দেখে অন্য পশুরা বললো, “বেশি চালাকি করতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলে কৌশিক!”
এ থেকেই আমরা শিখতে পারি, মাত্রাতিরিক্ত চালাকি করাও বিপদ ডেকে আনতে পারে। সততা এবং সম্মানই সত্যিকারের শক্তি। কৌশিকের গল্প আমাদের শিখিয়ে দিলো যে মিথ্যা বললে বা অন্যদের বোকা বানানোর চেষ্টা করলে শেষত সেটা নিজের দিকেই ফিরে আসবে। এইসব আত্মচিন্তার ঊর্ধ্বে গিয়ে কৌশিকের কষ্টের অভিজ্ঞতা আমাদের সাবধান থাকতে শেখায়। সততা এবং সঠিক কাজই মানুষের প্রকৃত ইজ্জত এবং সম্মান অর্জিত করতে পারে। তাই চলো আমরা মিথ্যা ও ধোঁকা থেকে দূরে থাকি এবং সততা ও সৎ কাজের পথেই চলি।