মেধাবী রাকেশ ও জ্ঞানী শ্রীমতী
এক দেশে ছিল এক ছোট্ট গ্রাম, নাম তার শিবালয়। সেই গ্রামে থাকত এক কিশোর, নাম তার রাকেশ। রাকেশ খুব মেধাবী ছিল, তবে একটা ব্যাপারে তার মনোযোগ ছিল না—সে ছিল খুব অনিয়মিত। সে কখনও সময়মতো পড়তে বসত না, খেলাধুলা করত না, এমনকি ঘর গোছাতেও ইচ্ছে করত না। তার মা-বাবাও এ নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল।
একদিন রাকেশের গ্রামে এলেন এক জ্ঞানী মানুষ, নাম তার শ্রীমতী। তিনি গ্রামের মানুষকে নানান ভালো উপদেশ দিতেন। রাকেশও তার কাছে গেল এবং তার সমস্যার কথা বলল। শ্রীমতী তার কথা শুনে মৃদু হেসে বললেন, “বৃক্ষ যেমন শক্ত হতে সময় নেয়, তেমনই জীবনের সুখ এবং সফলতা পেতে শৃঙ্খলা প্রয়োজন।”
রাকেশ কিছুটা ভেবে বলল, “শৃঙ্খলা কীভাবে আমার জীবনে পরিবর্তন আনবে?” শ্রীমতী বিনয়ের সাথে উত্তর দিলেন, “শৃঙ্খলা হল জীবনের সে নিয়মবিধি যা আমাদের অগ্রগতির পথে নিয়ে যায়। নিয়মিত পড়াশোনা, সময়ের সঠিক ব্যবহার আর কাজের পরিকল্পনা জীবনকে সুন্দর করে।”
তিনি আরও বললেন, “তুমি যদি প্রতিদিন ঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠো, পড়তে বসো, এবং সময়মতো বিশ্রাম নাও, তাহলে তুমি নিজের অভ্যন্তরীণ শক্তি বাড়িয়ে তুলবে।”
রাকেশের মনে হলো, হয়তো শ্রীমতীর কথা সত্যি। সে স্থির করল সুন্দর জীবন গড়তে এবার নিয়ম মেনে চলবে। সে প্রতিদিন সকালে উঠে পড়তে বসত, স্কুল শেষে খেলতে যেত, এরপর যখন ঘরে ফিরত, তখন বাড়ির প্রয়োজনীয় কাজ করত। ধীরে ধীরে, সে নিজেই শৃঙ্খলার সুফল দেখতে পেল। তার স্কুলের ফল ভালো হতে লাগল, সে বিভিন্ন খেলাধুলায় পারদর্শী হয়ে উঠল, এবং তার পরিবারেও সবাই খুশি হল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, রাকেশ বুঝতে পারল শৃঙ্খলা শুধু পড়াশোনা বা খেলা নয়; সংসার জীবনেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। দিনের কাজগুলো ঠিকঠাক ভাবে করা, পরিবারের সকলের সাথে সময় কাটানো এবং দায়িত্ব পালন করা—এসবই জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে দেয়। সে দৈনন্দিন জীবনে শৃঙ্খলার গুরুত্ব ভালোভাবে বুঝতে পারল।
একদিন গ্রামের একটি বড় অনুষ্ঠানে রাকেশকে আমন্ত্রণ জানানো হল। সেখানে শ্রীমতীও উপস্থিত ছিলেন। তিনি রাকেশকে বললেন, “তুমি নিজেই প্রমাণ করেছ, শৃঙ্খলা তোমার জীবনকে কতটা উন্নত করেছে। আজ তোমাকে দেখে অন্যরাও শিক্ষা নিতে পারে।”
রাকেশ হাসল, এবং বলল, “আপনার শিক্ষা আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে। আমি এখন জানি শৃঙ্খলার মাধ্যমেই সব কিছু অর্জন করা সম্ভব।”
এরপর থেকে রাকেশ আর বাকিদের অনুপ্রাণিত করতে লাগল এবং তার গ্রামে আরও অনেকের মাঝে শৃঙ্খলা আনার প্রচেষ্টা শুরু করল। শিবালয় গ্রামের প্রতিটি শিশু তখন থেকে বুঝতে পারল যে শৃঙ্খলা না থাকলে জীবন দুরূহ হয়ে যায়, আর শৃঙ্খলা থাকলে সফলতা অর্জন সহজতর হয়।
এভাবেই রাকেশের জীবন প্রদীপ জ্বলে উঠল শৃঙ্খলার আলোতে, আর তার গল্প থেকে গ্রামের অন্যরাও শিক্ষালাভ করল। তারা বুঝল—শৃঙ্খলা, প্রকৃত পক্ষে, জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ যা আনন্দ ও সফলতার পথ প্রদর্শক।
এইরকমই শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে রাকেশ এবং তার গ্রামের সকলে জানতে পারলো, কিভাবে একটি ভালো জীবন গঠন করা সম্ভব। গল্পের শিক্ষাটা হলো—দৈনন্দিন জীবনে শৃঙ্খলা বজায় রাখলে, জীবনের সব কিছু সহজ ও সফল হয়ে ওঠে।