শান্তির পেঁচার গল্প
এক রহস্যময় বন ছিল যেটি ছিল নানা রকম প্রাণীতে পূর্ণ। সেখানে এক বুড়ো পেঁচা বাস করত। এই পেঁচা খুব জ্ঞানী ছিল এবং অন্য সকল প্রাণী তাকে সম্মান করতো। তার নাম ছিল পণ্ডিত পেঁচা।
একদিন এক গ্রীষ্মের সকালে বনের সব প্রাণী একসঙ্গে বসেছিল গল্প করতে। হঠাৎ করেই গাছের ডালে বসে থাকা কিছু বাঁদর শুরু করল মজা করতে। তারা সবাইকে উদ্দেশ্য করে অদ্ভুত শব্দ করে, গাছের ফল ছুড়ে দিচ্ছিল।
অনেক প্রাণী খুব বিরক্ত হল। তারা পণ্ডিত পেঁচার কাছে গিয়ে বলল, “এই বাঁদরদের এমন আচরণের জন্য কিছু করতে হবে। আমরা তাদের সঙ্গে লড়াই করতে চাই।”
পণ্ডিত পেঁচা মৃদু হাসলো এবং বলল, “প্রিয় বন্ধুরা, লড়াই করে কি কিছু মিলে? বরং শান্ত থেকে ওদের উপেক্ষা করো। সময়ের সাথে সাথে ওরা নিজেরাই শান্ত হয়ে যাবে।”
সব প্রাণী প্রথমে পণ্ডিত পেঁচার কথা তেমন মানলো না। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তারা ভাবতে লাগলো, “যদি পণ্ডিত পেঁচা এমন বলছেন, তবে অবশ্যই এতে কোনও কারণ আছে।”
তারা বাঁদরদের উপেক্ষা করতে শুরু করলো। বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে খেলা করতে এবং আনন্দ করতে লাগলো। বাঁদররা শুরুতে আরো ঝামেলা করার চেষ্টা করল। কিন্তু তারা দেখল যে, কেউই তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না।
দিন কয়েকের মধ্যে, বাঁদররা তাদের কার্যকলাপে বিরক্ত হয়ে ধীরে ধীরে থামতে শুরু করল। তারা বুঝতে পারল, তাদের কর্মকান্ডের জন্য কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না।
এদিকে পণ্ডিত পেঁচার জ্ঞানী উপদেশের ফলে প্রাণীগুলো তাদের শৈশবের আনন্দে স্বাভাবিকতায় ফিরে এলো। তারা বুঝল, প্রতিটি কাজের পেছনে প্রতিক্রিয়া দেখানোই সমাধান নয়। কখনো কখনো উপেক্ষা করা সবচেয়ে ভালো উপায়।
একদিন, বাঁদররা পণ্ডিত পেঁচার কাছে গেল এবং বলল, “পণ্ডিত পেঁচা, আমরা যা করেছি, তার জন্য আমরা দুঃখিত। এখন আমরা শান্তিতে থাকতে চাই এবং আপনাদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করতে চাই।”
পণ্ডিত পেঁচা সবাইকে সমান ভালোবাসা আর সম্মান দিয়ে বলল, “এটাই তো প্রকৃত শান্তির পথ। উপেক্ষা করতে শিখলে জীবনে অনেক সমস্যার সমাধান আপনি নিজেই করতে পারবেন।”
এইভাবে পুরো বন আবার সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো। সকলে মিলে সেই দিনটি উদযাপন করল যেদিন তারা শিখেছিল, কতটা শক্তিশালী হতে পারে উপেক্ষার শক্তি।
ফলাফল: বনের সকল প্রাণী শিখল যে অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষা করাই সর্বোত্তম প্রতিক্রিয়া। সবাই বোঝে, প্রতিক্রিয়ার বদলে শান্তভাবে থাকা জ্ঞানের পরিচয়।