ধৈর্যের জাদুর গল্প
এক গ্রামের নাম ছিলো সবুজপুর। এই গ্রামে ছিলো একটি সুন্দর পার্ক। সেখানে ছোট বড় সবাই খেলতে যেতে ভালোবাসতো। পার্কের মধ্যে ছিলো একটি বিশাল গাছ, যেটিকে সবাই ‘ধৈর্যের গাছ’ বলে ডাকত। গাছটির বড় বড় সবুজপাতা আর মহিমাপূর্ণ ডালগুলো যেন সবার মন ছুঁয়ে যেত। গাছের নিচে ছিলো একটি পুরনো বেঞ্চ, যেখানে বসে বাচ্চারা প্রায়ই গল্প করত।
সেই গ্রামে একটি ছোট্ট মেয়ে ছিলো, তার নাম মিলি। মিলি খেলাধুলায় খুবই উৎসাহী ছিলো, কিন্তু তার ধৈর্য ছিলো খুব কম। সে যখনই কোন কিছু চাষ করতে যেত, তার মনে হত যেন ফল পাবার জন্য অপেক্ষা করা অনেক কষ্টকর। এমনকি সে চায়ের পানি ফুটাতে যতটুকু সময় লাগত, তাতেও সে হতাশ হয়ে পড়ত।
একদিন মিলি পার্কে খেলতে গিয়েছিল। খেলার শেষে সে ধৈর্যের গাছের নিচে বসে থাকে। সে দেখে গাছটি হালকা বাতাসে নড়ছে, তার পাতারা নরম সুরে সরসর করছে। মিলি তখন বেঞ্চে বসে তার খেলার সাথীদের অপেক্ষা করছিলো।
এমন সময়, একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। গাছের একটি বড় পাতা হঠাৎ কানের মতো খুলে গেল এবং একটি দয়ালু কণ্ঠে বলল, “মিলি, তুমি কি জানো ধৈর্য কিভাবে তোমার জীবনকে আরো সুন্দর করতে পারে?”
মিলির তো এমন কথা শুনে অবাক হতে হয়। সে জিজ্ঞাসা করে, “তুমি কি আমাকে শেখাতে পারো, ধৈর্য কীভাবে আমার কাজের সুফল এনে দেবে?”
গাছটি মৃদু হেসে বলে, “বেশ, শুনো। একটি বীজ মাটির মধ্যে পিছলে যায়। সে বীজটি বড় গাছ হতে অনেক সময় নেয়। কিন্তু সেই ধৈর্যের মাধ্যমেই একদিন সে বিশাল গাছ হয়ে ওঠে। তেমনি, যদি তোমরা ধৈর্য ধরে পরিশ্রম করো, তাহলে তোমরা তোমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারো।”
মিলি ভাবলো এবং পরের দিন থেকে ঠিক করল সে ধৈর্যের সাথে প্রতিটি কাজ করবে। সে ঠিক করেছিলো, সে তার পছন্দের ফুলগাছের বীজ লাগাবে এবং প্রতিদিন তা যত্ন করবে। প্রতিদিন সে সকালে উঠে তার গাছে পানি দিতো, রোদ থেকে বাঁচানোর জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করত।
দিন যায়, রাত যায়, কিন্তু গাছটি টোকেনের মতোই নীরব। মিলি মাঝে মাঝে হতাশ হয়, কিন্তু সে তার লক্ষ্য থেকে সরে এল না। সে হতাশার মুহূর্তে গাছটির কথা ভাবত, যে ধৈর্য দেখালে চারপাশে কতো সুন্দর ফুল ফোটে।
অনেক কষ্ট আর ধৈর্যের পর একদিন মিলি দেখে তার গাছটিতে ফুটেছে এক টকটকে লাল ফুল। তার আনন্দ ছিলো অপরিসীম। ফুলটির সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল। সে বুঝল, ধৈর্যের কারণে সে এমন একটি সুন্দর ফলাফল পেয়েছে।
পরের দিন পার্কে মিলি তার সাথীদের তার গাছের গল্প বলল। সে বলল, “তোমরা দেখো, ধৈর্য ধরলে কতো সুন্দর ফল পেতে পারো। ধৈর্য আমাদের সবকিছু সুন্দর ও অর্থপূর্ণ করতে সাহায্য করে।”
সবাই মিলির গল্প শুনে অবাক হল এবং ধীরে ধীরে সেই গ্রামে ধৈর্যের মূল্য সবার মধ্যে বেড়ে উঠল। সবাই মিলে ধৈর্য ধরে কাজ করার শক্তি অর্জন করল।
এইভাবে মিলি এবং তার সাথীরা ‘ধৈর্যের গাছ’ থেকে অনেক বড় শিক্ষা নিলো। তারা বুঝল যে ধৈর্য নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং জীবনের সমস্ত চ্যালেঞ্জ পার করতে সাহায্য করে।
আর সবুজপুর গ্রাম হলো ধৈর্যের দ্বারা আলোকিত, যেখানে ছোট-বড় সবাই ধৈর্যের মন্ত্রে বলীয়ান।
শিক্ষণীয় নীতি: ধৈর্য সবকিছু সুন্দর করতে সাহায্য করে। যদি আমরা ধৈর্য ধরতে শিখি, তাহলে জীবনের কঠিন পথে সফলতার আলো দেখতে পাবো।