|

বন্ধুত্বের ডানায় উড়ো

একটা ছোটো শান্ত গ্রামে ছিলো একটি সুশোভিত বিদ্যালয়। তার নাম “হাসিমুখ বিদ্যালয়”। এই বিদ্যালয়ে ছোটো-বড়ো বিভিন্ন বয়সের ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করত। এবছর স্কুলে যোগ দিয়েছিলো কিছু নতুন ছোটো ছাত্র-ছাত্রী যারা একটু ভীতু ছিলো। তাদের নাম ছিলো রমা, টুকনু এবং পলু।

স্কুলের প্রথম দিনেই, ছোটোরা সবাই খুব ভয় পেয়েছিল। তারা ভাবছিল, “যদি বড়োরা আমাদের ভয় দেখায়?” তাই তারা হাঁটাচলা করছিলো খুব সাবধানে এবং আন্তরিকভাবে ক্লাসে বসে পড়ল।

কিন্তু, ওই স্কুলে ছিলো কিছু বড়ো এবং বুদ্ধিমান রোল মডেল শিক্ষার্থী। যেমন, অরণ্য, রিয়া এবং সৌরভ। তারা জানতো, “পরোপকারেই প্রকৃত সুখ।” তারা ঠিক করেছিল যে, এই নতুন ছোটো ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্য করবে।

একদিন দুপুরে, রমা তার নতুন নতুন বই নিয়ে একা একা স্কুলের বাগানে বসেছিল। সে দেখতে পেল, কিছু বড়ো ছাত্র তার দিকে এগিয়ে আসছে। সে ভয় পেয়ে গেল এবং ভাবল, “যদি তারা আমাকে ভয় দেখায়?” কিন্তু বড়ো ছাত্রদের মুখে ছিল না কোনো রাগ বা ভয়, বরং হাসির ঝিলিক।

অরণ্য বলল, “হাই রমা, তুমি কি আমাদের সঙ্গে খেলবে?” রমাও অবাক হয়ে একটু সাহস করে জবাব দিলো, “আমার ঠিক জানা নেই, তবে খেলতে ভালোই লাগবে।”

এই প্রথমবার রমা দেখল, বড়োরা কতটা সদয় এবং বন্ধুবৎসল হতে পারে। তাদের সঙ্গে খেলে, রমা বুঝল বন্ধুত্বের মর্ম। আর এই উপলব্ধি হল তার সমাজিক জীবনে।

অন্যদিকে, টুকনুও প্রথমে অস্বস্তি বোধ করেছিল। সে ক্লাসে পেছনের বেঞ্চে বসে প্রায়ই একা একা থাকত। সৌরভ একদিন টুকনুর কাছে এসে বলল, “হ্যালো টুকনু! আমি তো তোমার ব্লকের অঙ্কে সাহায্য করতে চাই। চল, আমরা মিলে মিশে কাজ করি।”

টুকনু এত ভালো ব্যবহার দেখে মুগ্ধ হয়ে সৌরভের সঙ্গে পড়াশোনা শুরু করল। তাদের মধ্যে একটি গভীর বন্ধুত্ব শুরু হল যেখানে ভয় নেই, কেবল আছে সহযোগিতা।

এরপর ছিল পলুর ঘটনা। রিয়া একদিন পলুকে স্কুলের বারান্দায় একা একা বসে থাকতে দেখে তার কাছে যায়। রিয়া তাকে বলে, “পলু, আমি আজ তোমাকে টিফিনে আকর্ষণীয় কিছু জিনিস শিখিয়ে দেব। তুমি আমার সঙ্গে খেলতে এসে টেনিস খেলা শিখলেও পারো।”

পলু তৎক্ষণাৎ ভয়ে গুটিয়ে যাওয়া বন্ধ করল এবং বুঝল যে বড়োরা নিজেদের সমান মনে করতে চায় আর সাহায্য করতে চায়। সেই দিন থেকেই পলু নিশ্চিত হল যে বড়োরা প্রকৃতপক্ষে ভয়ের নয়, বরং বন্ধুত্বপূর্ণ।

শুধু দুটি মাসে, রমা, টুকনু, এবং পলু বিদ্যালয়ের গর্ববোধ করছিল। তাদের জীবনে নতুন বন্ধুত্বের সুবাস এসে ধরা দিল। তারা আর ভয় পেত না, বরং তাদের বিদ্যালয়ের টাইমটাই ভালো লাগতো।

এই গল্পের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা বুঝতে পেরেছিল যে, ভয় দেখিয়ে নয়, ভালোবেসে এবং হাতে হাত মিলিয়ে আমরা আমরা নিজেদের সমাজকে আরও ভালো করে তুলতে পারি।

এইভাবে, “হাসিমুখ বিদ্যালয়” সত্যিই হাসিমুখ হয়ে উঠেছিল। বড়োরা ছোটোদের বন্ধু বানিয়ে নেয়, আর ছোটোরা সময়ের সঙ্গে বড় হয় আর বড়োদের মতো ভালো আচরণ করত।

বন্ধুত্ব আর ভালোবাসা দিয়ে তৈরি এইখানে এক নতুন অধ্যায়, যেখানে সবাই মিলে মিশে হাসি খুশিতে ছিল, আর তারা জানতে পেরেছিল, যে জীবন হল সুন্দর, যখন সবাই মিলে হৈ চৈ করা যায়।

আর তাই, বন্ধুদের সত্যিকারের বন্ধু হয়ে থাকতে জানো আর দেখো কিভাবে জীবন সবসময় হাসবে তোমার দিকে।

Similar Posts

Leave a Reply