বিশেষজ্ঞ টিয়া পাখি
একদা বনের মাঝে ছিল একটি ছোট্ট গ্রাম, যার নাম ছিল আনন্দপুর। এই গ্রামে ছোট-বড় সবাই খুবই মজার খাবার খেতে ভালোবাসত। তবে দুঃখের বিষয় ছিল, সবাই শুধু বাইরের মনোমুগ্ধকর খাবার খেয়ে খুশি হতো। পটেটো চিপস, চকোলেট, কোল্ড ড্রিঙ্ক – এই সবের প্রতি ছিল সকলের বিশেষ দুর্বলতা।
এই গ্রামে ছিল রনি নামের একটি বুদ্ধিমান ছেলে। কিন্তু সম্প্রতি সে লক্ষ্য করল যে পড়ালেখা করার সময় তার মন নাকি কিছুতেই এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত করতে পারছে না। রাত জেগে মোবাইলে গেম খেলা তার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিন তার দাদি তাকে বললেন, “রনি, তোমার এমন অবস্থা কেন জানো? কারণ এই যে বাইরের খাবার তুমি খাচ্ছো, এগুলি তোমার শরীর এবং মনের জন্য উপকারী নয়।”
রনি তো অবাক! বাইরের খাবার কি করে তার মনে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে? দাদি বললেন, “শোন, আমরা যা খাই, তার প্রভাব আমাদের শরীর এবং মনে পরে। বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলো স্বাদে মজাদার হলেও, এগুলি শরীরের উপকারী নয় বরং ক্ষতি করে। এতে চিনি ও চর্বি বেশি থাকে, যা আমাদের মন এবং শরীরকে দুর্বল করে।”
তখন গ্রাম থেকে কিছু দূরে বনের মধ্যে ছিল একটি বুদ্ধিমান টিয়া পাখি, যার নাম ছিল গুগলি। রনি তার কথা শুনে তার বাড়ি গিয়ে তাকে খুঁজে বের করল। গুগলি ছিল পুষ্টি বিশেষজ্ঞ।
গুগলি বলল, “রনি, পুষ্টিকর খাবার যেমন, সাদা চালের বদলে বাদামি চাল, তাজা সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম এবং দুধ এগুলি প্রতিদিন খাওয়া উচিত। এগুলি তোমার মস্তিষ্ককে সুস্থ ও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। খারাপ খাবার বাদ দিয়ে এসব শুরু করো, তারপরই দেখবে কত পরিবর্তন আসে।”
রনি গুগলির পরামর্শ মেনে সেখানে তার পছন্দের কিছু তাজা ফল কিনতে গেল। সে কথা দিল, প্রতিদিন কিছু করে পুষ্টিকর খাবার খাবেই খাবে। সে বেশ কটা দিন এভাবেই কাটিয়ে দিল।
কিছু সপ্তাহ পর, রনি লক্ষ্য করল যে তার মনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তার পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শরীরেরও কার্যক্ষমতা বেড়েছে। তার বিদ্যালয়ের শিক্ষকও তাকে বলল যে, সে আগের চেয়ে অনেক ভালো ফল করছে।
রনির নজরে এল যে তার বন্ধুরাও আগের ভুলগুলো করে যাচ্ছে। তখন সে তাদের সমস্ত কথা বলল এবং গুগলির টিপসগুলোও শেয়ার করল। সবাই মিলে ঠিক করল, তারা একসাথে প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাবে এবং বাইরের খাবার থেকে নিজেরা দূরে থাকবে।
এভাবেই রনি এবং তার বন্ধুদের ছোট্ট একটি দল গড়ে উঠল, যারা গ্রামের অন্য শিশুদেরও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শেখাতে শুরু করল। গ্রাম আনন্দপুরের সকল মানুষও আস্তে আস্তে তাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যকর খাবারের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করল।
অবশেষে, আনন্দপুরে আর বাইরের খাবারের প্রতি আসক্তি রইল না। গ্রামবাসীরা রনির মতামত গ্রহণ করে নিজেদের জীবনে এনেছে এক নতুন মাত্রা। তারা বুঝতে পেরেছে যে সুস্বাস্থ্য এবং সঠিক মানসিক বিকাশের জন্য পুষ্টিকর খাবার কতটা গুরুত্বপূর্ণ।এই গল্প থেকে শিক্ষা হল, বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার স্বাদে যতই মজাদার হোক না কেন, আমাদের স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য পুষ্টিকর খাবারই বেছে নিতে হবে। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন সচেতনতা বাড়ায় এবং আমাদের জীবনকে করে তোলে স্বাস্থ্যকর ও সুখের।