বুদ্ধিমান বেলুনের অভিযান
একদিন ছুটির সকালে ছোট্ট বেলুনের হঠাৎ অদ্ভুত এক ইচ্ছা হয়। সে ঠিক করল, মেঘের উপর দিয়ে দূরে কোথাও উড়ে যাবে। তার মা তাকে বারবার বলেছিল, “বেলুন, তুমি একা একা কোথাও যেও না। বায়ুপ্রবাহ অজানা দিকে তোমাকে নিয়ে যেতে পারে।”
কিন্তু বেলুনের মনে হলো সে যথেষ্ট বুদ্ধিমান এবং অভিজ্ঞ, তাই সে সেসব কথা কানে তুলল না। সে ফু দিয়ে নিজেকে বড় করে বাতাসে ভাসতে লাগল। ওড়ার আনন্দে মত্ত, ছোট্ট বেলুন দেখতে দেখতে মেঘেদের দেশ পেরিয়ে গেলো।
এদিকে পৃথিবীতে বেলুনের মা চিন্তা করে করে অস্থির। আকাশে তাকিয়ে তিনি তার প্রিয় সন্তানকে খুঁজছিলেন। “আমি যদি তাকে খুঁজে না পাই?” মা উৎকন্ঠায় বললেন।
ওদিকে মেঘদের দেশে যাত্রারত বেলুন আনন্দে বিহ্বল। তার পায়ে যেন ডানা লেগেছে। তবে হঠাৎ করেই কালো মেঘেরা গর্জন করতে শুরু করেছে এবং বাতাসের গতি বেড়ে গেল। বেলুন বুঝতে পারল যে, সে বিপদের মধ্যে পড়ে গেছে। বাতাস তাকে নিয়ে আরও দূরে অজানায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
অন্ধকার আর ঝড়ের মাঝে বেলুন তার দিশা হারিয়ে ফেলে। সে ভাবছিল, “হায়, মায়ের কথা যদি মানতাম! মা তো আমাকে সতর্ক করেছিল।”
কিন্তু দুঃসময়ে বেলুনের মনে হলো, বুদ্ধি দিয়ে সে কৌশল খুঁজতে পারবে। তার সোনালী সুদিনের মুহূর্তগুলো মনে করলো, যখন মায়ের সাথে সে খুশির সময় কাটাতো। মায়ের বুদ্ধিমত্তার গল্পগুলো সব তার মনে পড়ে গেল।
বুদ্ধি খাটিয়ে বেলুন বাতাসের দিক বদলের কৌশল শিখেছে। সে তার পথকে একটু নিচের দিকে মোড়াতে শুরু করল যাতে ঝড়ের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। কিছু সময় চেষ্টা করার পরে বেলুন দেখতে পেলো একটি শান্ত নির্জন গ্রাম।
সুখের শ্বাস ফেলে, বেলুন ধীরে ধীরে নেমে এলো এবং গ্রামের শিশুদের কাছে এসে পড়ল। শিশুরা বেলুনকে দেখে আনন্দে চিৎকার করে উঠলো। তারা আশ্চর্য হয়ে বলল, “তুমি কোথা থেকে এসেছো, প্রিয় বেলুন?”
বেলুন তার গল্প বলতে লাগলো এবং সবার কাছে মায়ের কথা মেনে চলার গুরুত্ব বোঝালো। শিশুরা শুনে অবাক হলো এবং প্রতিজ্ঞা করলো যে, তারা কখনো অবাধ্য হবে না।
এমতাবস্থায় গ্রামের একটি ছোট্ট শিশুর হাতে শক্ত পেঁচিয়ে থাকা সুতো ধরে বেলুনটি তার বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করল। সে আর ভুল করবে না, মা তাকে সবসময় ভালো কিছু করার পরামর্শই দেন।
বেলুন বাড়ি ফিরে আসলে মায়ের আনন্দে চোখে জল আসে। তিনি বেলুনকে কাছে টেনে নিয়ে বলেন, “তুমি অনেক কিছু শিখেছ, প্রিয় বেলুন। মনে রেখো, বাবা-মায়ের আদেশে সবসময় তোমাদের ভালোই চাওয়া থাকে।”
এই ঘটনায় বেলুন বুঝতে পারল যে, মায়ের কথা মেনে চলা মানেই নিজের ভালো থাকা। ছোট্ট বেলুনের এই শিক্ষাকে হৃদয়ে ধারণ করে সে খুশীর সাথে মায়ের গাড়িতে চেপে বাড়ি ফিরে আসে এবং প্রতিজ্ঞা করে যে এখন থেকে সে আর এমন ভুল করবে না।
পরের দিন, বেলুনের গল্পে গ্রামের সব শিশুর কাছে একটি নতুন শিক্ষা পাওয়া গেল। এবার তারা বুঝতে পারল, বাবা-মায়ের নির্দেশনা মানা কেমন গুরুত্বপূর্ণ। এভাবেই ছোট্ট বেলুনের অভিযানের মাধ্যমে সে এবং বাকিরাও শিখল, কখনো অবাধ্য না হয়ে মায়ের কথায় কান দেয়া কতটা প্রয়োজন।
ফলাফল: ছোট্ট বেলুনটি তার নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিলো এবং মায়ের কথা মানার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারল। এই অভিজ্ঞতা তাকে এবং অন্যদের এক সুন্দর বার্তা দিল, মায়ের ভালোবাসা আর নির্দেশনার মর্ম বুঝতে শেখালো।