ভাগ্যের রচয়িতা হওয়ার গল্প
এক ছিল কিশোর, নাম তার তন্ময়। তন্ময় এক শান্ত সুন্দর গ্রামে বাস করত, যার চারপাশে ছিল সবুজ মাঠ আর নদী। সে ছিল খুবই পরিশ্রমী, তবে মাঝে মাঝে মনে হত তার সব পরিশ্রম বৃথা যাচ্ছে। সে সবসময় ভাবত, “কেন আমার ভাগ্য ভালো হয় না? কেন আমি সব কিছুতেই পিছিয়ে পড়ি?”
একদিন তন্ময়ের পিতামহ, মণীশ দাদু, তাকে গল্প শোনাতে বসলেন। তিনি বললেন, “তুমি কি জানো, পরিশ্রমই ভাগ্যকে তৈরি করে?”
তন্ময় খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কিন্তু কীভাবে দাদু?”
মণীশ দাদু বললেন, “আমি তোমাকে একটা গল্প শোনাই। একবার এক কৃষক ছিল, নাম তার করিম। করিম খুব গরীব ছিল, কিন্তু কিছুতেই হার মানত না। তার একটি ছোট্ট খেত ছিল যেখানে সে চাষ করত। প্রতিদিন ভোরবেলা উঠে সে খেতে কাজ করত, এমনকি যখন সবাই বিশ্রাম নিত তখনও করিম পরিশ্রম করত।”
তন্ময় মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগল। দাদু বললেন, “একদিন করিমের খেতে অজস্র ফল আসল। খুশিতে করিম সেই ফল বাজারে নিয়ে গেল এবং সেই ফল বিক্রি করে প্রচুর টাকা পেল। পরিশ্রমের ফলে তার খেত ধীরে ধীরে আরো বড় হতে লাগলো। করিম বুঝতে পারল যে ভাগ্য তার দিকে মুখ ফিরিয়েছে, তা তার কঠোর পরিশ্রমের ফলেই।”
তন্ময় আবার প্রশ্ন করল, “তাহলে পরিশ্রমই কি সব কিছু নির্ধারণ করে দেয়?”
মণীশ দাদু হেসে বললেন, “হ্যাঁ, তন্ময়। পরিশ্রমই আমাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। যদি তুমি সৎ ও কঠোর পরিশ্রম করো, তাহলে তুমি অবশ্যই ভালো ফল পাবে। কখনও কখনও আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন হতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু তুমি যদি পরিশ্রম করো, তাহলে তোমার জীবন আজ না হোক, কাল বদলে যাবে।”
এই কথা শুনে তন্ময়ের মনে অনেক সাহস এল। সে বুঝতে পারল যে নিজেকে ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল না রেখে কঠোর পরিশ্রমে লেগে থাকতে হবে। সে তার পড়াশোনায় মন দিল এবং তার সমস্ত কাজ দৃঢ় মনোবল নিয়ে করতে লাগল।
কিছু সময় পরে, তার কঠোর পরিশ্রমের ফল সে পেতে শুরু করল। স্কুলে সে ভালো ফল করতে লাগল, শিক্ষকরা তাকে প্রশংসা করতে লাগল, এবং আস্তে আস্তে সে তার এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠল।
তন্ময় উপলব্ধি করল যে পরিশ্রমই আসল সৌভাগ্য এনে দেয়। মণীশ দাদুর কথাগুলো সত্যি প্রমাণিত হয়েছিল, কারণ কঠোর পরিশ্রমই তার ভাগ্য খুলে দিয়েছিল।
এ গল্পটি আমাদেরকে শেখায় যে, ভাগ্যের চাকা আমাদের মত করে ঘুরতেই থাকে এবং তার গতিপথ পরিবর্তিত হয় কেবলমাত্র আমাদের পরিশ্রম আর নিষ্ঠা দিয়ে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজেদের ভাগ্যের রচয়িতা হতে পারি।