| |

সুখী সমতার গল্প

একদিনের কথা, এক ছোট্ট গ্রামে যেখানে সবাই খুব সুখে-শান্তিতে বসবাস করতো, সেখানে একটি ছোট্ট নামকরা স্কুল ছিলো। এই স্কুলে পড়াশোনা করতো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের, বিভিন্ন আর্থিক স্তরের ছেলে-মেয়েরা। স্কুলের অন্যতম প্রিয় শিক্ষক ছিলেন মানিক স্যার। স্যার সবসময় ছাত্রদের মধ্যে ভালোবেসে পড়ানোর পাশাপাশি মান্যতা, নৈতিকতা ও সমতার শিক্ষা দিতেন।

একবার, স্কুলে একটি বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিলো। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য ছাত্রদের খুব আগ্রহ ছিলো। কিন্তু একটি ঘটনা ঘটলো, যা সবাইকে একটু ভাবিয়ে তুলল।

একদিন প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির মধ্যে শ্যাম নামক ছেলে, যার পরিবার ছিলো আর্থিকভাবে দুর্বল, সে খেলায় অংশগ্রহণ করতে চাইল। কিন্তু কিছু ছাত্র তাকে বললো, “তুমি খেলতে পারবে না, তোমার তো কোনো ভালো জুতোও নেই!” শ্যাম খুব কষ্ট পেলো।

এই ঘটনা মানিক স্যারকে জানানো হলো। স্যার খুব চিন্তিত হলেন এবং ঠিক করলেন যে তিনি সবাইকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিবেন।

পরের দিন, স্যার ক্লাসে এসে শ্যামকে সামনে দাঁড়াতে বললেন এবং বললেন, “শ্যামের সাথে যা ঘটেছে, তা কি ঠিক হয়েছে?” সব ছাত্ররাই চুপ ছিলো।

তখন স্যার বলেন, “খেলাধুলা বা পড়াশোনায় আমাদের মধ্যে সবাই সমান। কেউ ধনী, কেউ দরিদ্র, কেউ হিন্দু কেউ মুসলিম, কেউ ছেলে কেউ মেয়ে – এতে শিক্ষার বা প্রতিভার মাপকাঠিতে কোনো ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়।”

মানিক স্যার ক্লাসের সবাইকে বললেন, “বইয়ের পাতা কিংবা খেলাধুলার মাঠ সবাইকে একসাথে শেখায় যে, সমতা আর সম্মান সবার প্রাপ্য। কেউ যদি প্রতিভাবান হয়, তাহলে সেটা তার পরিশ্রম আর উদ্যমের কারণেই হয়। আমাদের উচিত সবাইকে সমান দৃষ্টিতে দেখা এবং তাদের প্রতিভাকে স্বীকার করা।”

তারপর স্যার বললেন, “আজ থেকে আমাদের স্কুলে এক নতুন নিয়ম চালু হবে। এখানে সবাই সবাইকে সমান গুরুত্ব দেবে এবং একে অপরকে সম্মান করবে। সবাইকে সহানুভূতি ও সহযোগিতার চোখে দেখতে হবে।”

সব ছাত্ররা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো এবং বুঝতে পারলো যে তাদের আচরণ শ্যামের প্রতি ভুল ছিলো। তারা শ্যামের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইল এবং প্রতিশ্রুতি দিলো যে তারা সবাই একসাথে খেলবে এবং পড়াশোনা করবে।

শ্যামের মুখে হাসি ফুটল এবং তার বন্ধুরাও তাকে আবার খেলার জন্য অনুরোধ করলো। এর পর থেকে, সেই স্কুলে আর কেউ কোনো ভেদাভেদের কথা শোনেনি। সবাই মিলে মিশে একজন আরেকজনকে সাহায্য করে পড়াশোনা এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করেছে।

এই ঘটনার পরে, মানিক স্যারের শিক্ষা সবার মনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছিলো। তারা জানলো যে সমাজে সবার জন্য সমান মূল্য থাকা আবশ্যক। এই সমতা তাদের শুধুমাত্র স্কুল জীবনের জন্যই নয়, বরং সারাজীবনের পথচলার সঙ্গী হয়ে উঠবে।

এভাবেই সবার অন্তরে সমতা আর মানবতার আলো জ্বলে উঠলো, আর শ্যাম এবং তার বন্ধুরা খুশিতে দিন কাটাতে লাগল, কারণ তারা জানতো – তাদের মূল্য সবাই সমানভাবে দেয়। এবং এটাই সত্যিকারের সুখ আর শান্তির রহস্য।

Similar Posts

Leave a Reply